#অন্তর্ভুক্তিমূলক_সমাজ_চাইলে_আগে_দৃষ্টিভঙ্গি_বদলাতে_হবে
✅সমাজবাস্তবতা
আমাদের সমাজে শারীরিক, লিঙ্গ, নৃতাত্ত্বিক, বৈবাহিক অবস্থানসহ নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হন অনেকে। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র—সবখানেই এসব বৈষম্য বিরাজ করছে। বৈষম্যমূলক আচরণ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের বড় বাধা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বৈষম্যমূলকের আচরণ আমরা দেখে থাকি। বৈষম্য দূরীকরণে রাষ্ট্র ও সরকার অনেক কিছুই করে থাকে। এরপরও তা যথেষ্ট নয়। সমাজের নানা ক্ষেত্রে কীভাবে বৈষম্য দূর করা যাবে, তা নিয়ে লিখেছেন লায়লা খন্দকার
27/08/2024
● গায়ের রং, উচ্চতা, ওজন ইত্যাদি নিয়ে কটু মন্তব্য শোনাসহ অনেকে নানা আচরণের শিকার হন।
● সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে নানা ধরনের বৈষম্য চলতেই থাকবে।
● বৈচিত্র্যই মানবসমাজকে সুন্দর ও শক্তিশালী করে। সবাই এক রকম হলে সবকিছু একঘেয়ে হয়ে যেত।
● নেতিবাচক আচরণ না করে প্রত্যেকের সিদ্ধান্তকে সম্মান করতে শিখলে সমাজটা সবার জন্য আরও বাসযোগ্য হবে।
এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি কোর্সে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে সেশন নিয়েছিলাম। বিষয় কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যহীন আচরণ। শুরুতেই অংশগ্রহণকারীদের অনেকে নিজ জীবনের গল্প বললেন। শৈশব-কৈশোরে গায়ের রং, উচ্চতা, ওজন ইত্যাদি নিয়ে কটু মন্তব্য শোনাথেকে শুরু নানা ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন।
এই অভিজ্ঞতা কীভাবে তাঁদের মনঃকষ্টের কারণ হয়েছে, কখনোবা আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিয়েছে, সেই বিষয়টিও আলোচিত হলো। পরিণত বয়সেও পারিবারিক, সামাজিক এবং কর্মজীবনে এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, তা অনেকেই বললেন। এটাই আমাদের সমাজের অনেক মানুষের জীবনের বাস্তবতা। কেউ কেউ ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী বা মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে অসংবেদনশীল মন্তব্য হরহামেশাই করেন।
এই হাসিঠাট্টা যে অন্যদের ক্ষতির কারণ হচ্ছে, সে বিষয়ে কি আমরা সচেতন?
বৈষম্য দূরীকরণে নানা ধরনের আইন ও নীতিমালার প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের দায়িত্ব আছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও আচরণবিধির মাধ্যমে কর্মীদের নির্দেশনা দেয়, কী গ্রহণযোগ্য আর কী করা যাবে না, তা সুনির্দিষ্ট করার চেষ্টা করা হয়। এসব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের জন্য তা যথেষ্ট নয়। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে নানা ধরনের বৈষম্য চলতেই থাকবে। রাষ্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে সাধারণত বর্ণ, লিঙ্গ, নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, প্রতিবন্ধিতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। কিন্তু মানববৈচিত্র্যের আরও অনেক দিক আছে।
বৈচিত্র্যই মানবসমাজকে সুন্দর ও শক্তিশালী করে। সবাই এক রকম হলে সবকিছু একঘেয়ে হয়ে যেত। কিন্তু আমরা যে বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, তা অন্য কারও না থাকলেই তার ‘সমস্যা’ আছে বলে বিবেচনা করছি। নিজেরা যেমন জীবনযাপনে অভ্যস্ত, কেউ তেমন না হলেই তাকে সামাজিকভাবে গ্রহণ করতে আমাদের অনীহা, ভাবটা এমন যে সে ‘ভুল’ করছে। কিন্তু একেকজনের চাওয়া-পাওয়া একেক রকম।
‘সুখ’ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করেন পল ডোলান। তাঁর বই ‘হ্যাপি এভার আফটার’–এ লিখেছেন যে পড়াশোনা, পেশাগত সাফল্য, স্বাস্থ্য, বিয়ে, সন্তান ইত্যাদি নিয়ে সুখী হওয়ার ফর্মুলাবিষয়ক একটা সামাজিক ন্যারেটিভ আছে। সমাজের সংজ্ঞা অনুযায়ী সুখী হওয়া কারও কারও জন্য প্রযোজ্য হলেও সবার ক্ষেত্রে তা কাজ করে না। নানা রকমের সুখী এবং অর্থপূর্ণ জীবন আছে। অন্যদের চোখে সুখী হতে গিয়ে অনেকে ভীষণ অসুখী জীবন কাটায়; এই ফাঁদ থেকে মুক্তি পেয়ে কীভাবে নিজস্ব প্রত্যাশা অনুযায়ী সুখের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে, তা বইটির উপজীব্য।
#Coachkamrulhasan #ckhnetwork