মোহকাল - ওমর খালেদ রুমি
এভাবে পালানোটা কি লজ্জার নয় বাবা? আমি তো জানতাম তুমি সৎ এবং সাহসী। তাহলে এভাবে রাতের আধারে পালাচ্ছ কেন? তুমি কি এ ব্যাপারে আমাকে কিছু বলবে?
হ্যাঁ, বলবো। অবশ্যই বলবো। তুমি আমার সন্তান। তাছাড়া তুমি আমাকে সঙ্গ দিচ্ছ। তাই এটা জানার হক তোমার আছে। তবে এখন শুধু আমাকে অনুসরণ করো। এখন সময় নয় সব কিছু খুলে বলার। একটু দেরী হয়ে গেলেই আমরা ধরা পড়ে যেতে পারি। মনে রেখো আমাদের মৃত্যু আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আর আমাদের সতর্কতাই আমাদের জীবন।
কিন্তু কিছু একটা তো অন্ততঃ বলো যা আমাকে সান্ত¦না দিতে পারে। অন্ততঃ তোমার সঙ্গী হওয়ার ব্যাপারে একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যা আমার কাছে তুলে ধরতে পারো?
আমাদের নবী (সাঃ) ও পালিয়েছিলেন - মক্কা থেকে মদীনায়। সাথে ছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ)। তুমি নিশ্চয়ই সে কথা জানো?
হ্যাঁ জানি। কিন্তু তারা তো পালিয়েছিলেন আল্লাহ্র নির্দেশে। তোমার কাছে কি তেমন কোন ঐশী বাণী এসেছে?
আমি নবী নই। তাই ঐশী বাণী আসার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না। আমাকে আমার দেমাগ খাটিয়ে চলতে হয়। এখনই সময় পালাবার নইলে কাফেররা আমাদের ধরে ফেলবে। তারা আমাদের জবাই করবে। তুমি নিশ্চয়ই মরতে চাও না।
জগতে কে মরতে চায় বাবা? আমার দুর্ভাগ্য যে আমি এমন একজনের সন্তান যে রাতের আধারে পালাচ্ছে তার জীবন বাঁচাতে।
তার অপরাধ তাকে পিছন থেকে তাড়া করছে। আর তার কাছে তার সেই অপরাধগুলো ঢাকবার কোন সুযোগই অবশিষ্ট নেই। আমার লজ্জা লাগছে বাবা এভাবে কাপুরুষের মতো পালিয়ে যেতে। তোমার জন্যেই আমার এ লজ্জা। নইলে আজ আমি এই স্বাধীন মাটিতে আর দশটা শিশুর মতো মুক্তমনে আনন্দ চিত্তে খেলা করতে পারতাম। হায়রে কপাল আমার! জীবনের শুরুতেই আমার জীবনটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেলো। আমি যদি সারা জীবন চিৎকার করেও বলি আমি এ দেশকে ভালোবাসি লোকে তবু আমার দিকে আঙ্গুল উঁচু করে বলবে তুমি অমুকের সন্তান। সে এদেশের স্বাধীনতা চায়নি। শুধু না চেয়েই বসে থাকেনি বরং গর্হিত কাজ করেছে। ধর্ষণ, হত্যা, রাহাজানি, লুট, ডাকাতি সবই করেছে অবলীলায়।
তুমি কি দয়া করে এখন একটু থামবে? তোমার উচিত এখন আমরা যা করছি তার দিকে মনোযোগ দেওয়া। আজ রাতের মধ্যেই আমাদের এই এলাকাটা অতিক্রম করতে হবে। এটা এখন আমাদের জন্য মৃত্যুকূপ হয়ে গেছে। ভোরের আলো ফোটার আগেই আমরা এটা অতিক্রম করে নিরাপদ দূরত্বে সরে পড়তে চাই। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ আমি কি বলতে চাইছি? আর তোমার সব প্রশ্নের উত্তরও আমি যথাসময়ে দেব। তুমি অন্ততঃ এই একটা ব্যাপারে আমার উপর আস্থা রাখতে পারো। এখন চলো রওয়ানা হওয়া যাক। আমি জানি না এখানে আমরা আর কোনদিন ফিরতে পারবো কিনা। তিনি স্বদেশে ফিরলে পরিস্থিতি হয়তো আরও খারাপ হবে। তার সাঙ্গপাঙ্গোর আমাদের খুঁজে বের করে জ্যান্ত কবর দেবে।
চলো ওঠা যাক। যেতে যখন হবেই দেরী করে আর কি লাভ? রাত গভীর হচ্ছে। এখনই উপযুক্ত সময়। আমরা পারবো তো বাবা?
পারতে হবে সোনা আমার। আমাদের পারতেই হবে। নইলে জীবন চলে যাবে। বেঁচে থাকলে আবার নতুন করে ভাবতে পারবো।
তা-ও ঠিক। তবে সেই ভাবনাটাও যে কি হবে সে ব্যাপারেও আমি নিশ্চিত নই। তোমার ভাবনারা ভালো কোন গন্তব্য খুঁজে পায় না। অন্ধকার কানাগলিতে বার বার পথ হারায়। এ কথা তুমি নিজেই একদিন আফসোস করে বলেছ। আমি কথাটা মনে রেখেছি, কারণ কথাটা সত্য।
পুরোটা’৭১ জুড়ে অজ¯্র কালো রাতের মতো সে রাতেও সফল হয়েছিলো আনোয়ার আর তার একমাত্র পুত্র। তারা কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতে সক্ষম হয়। যে এলাকায় তারা পৌঁছেছিলো সেটা মূলতঃ তার অনুসারীদেরই এলাকা। এ এলাকায় তার মতো একই চিন্তাধারা ও কর্মের মানুষেরই বসবাস। এটাকে তাদের এক ধরণের ঘাঁটিই বলা যায়।
নিরাপদ জায়গায় এসে আনোয়ার সত্যিই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ছেলে সারোয়ারকে দেখেশুনে একটা মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়। তাদের থাকার জন্যেও একটা জায়গার বন্দোবস্ত হয়ে যায়। একই মত আর পথের মানুষেরা তাদের জন্য বরাবরই অনেক কিছু কোরবানী করতে রাজী থাকে। এখানেও তারা ব্যতিক্রম হয়নি।
আনোয়ার তার ছেলে সারোয়ারকে বলে, মদীনার আনসাররা মক্কার মুহাজিরদের জন্যে এভাবেই ত্যাগ স্বীকার করেছিলো। বাড়িয়ে দিয়েছিলো সহযোগিতার হাত। এমনকি যেসব আনসারদের একাধিক স্ত্রী ছিলো কিন্তু যেসব মুহাজিরদের স্ত্রী ছিলো না তারা তাদের স্ত্রীদেরকেও পরিত্যাগ করেছিলো মুহাজির ভাইদের খেদমতের জন্যে।
কথাগুলো সত্য বটে তবে সেক্ষেত্রে তো প্রেক্ষাপট ছিলো ভিন্ন। তারা এটা করেছিলো দ্বীনের প্রচারের খাতিরে। আল্লাহ্র হুকুমে মাতৃভূমি ত্যাগ করে। আর আমরা তো এমনটা করলাম মাতৃভূমির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। দুটো ব্যাপার কি এক হলো?
একই তো। তুমি কি ভুলে গেছ আমাদের মাতৃভূমির নাম কি? পাকিস্তান। সেই দেশ হারিয়ে আজ আমরা আবারও হিন্দুস্তানের কব্জায় পড়েছি। এটা যে কতো বড় অঘটন তা যখন তুমি বড় হবে তখনই বুঝতে পারবে। ইতিহাস জানতে হবে তোমাকে। প্রকৃত ইতিহাস।
সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু পাকিস্তানীদের শাসনামলেও আমি যতটুকু শুনছি আমরা খুব একটা ভালো ছিলাম না।
এটা একটা অপপ্রচার। ভারতীয়দের প্ররোচনায় সংঘটিত বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে চাঙ্গা করার জন্যে সবকিছু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলা হয়েছে। শাসক হিসেবে অতোটা মন্দ নয় যতোটা প্রচার করা হয়েছে। তবে কিছু ভুল ত্রæটি তাদেরও ছিলো। তবে তার জন্যে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ মুসলমানদের অস্তিত্বটাকেই আজ দুর্বল করে দিয়েছে। মনে রেখ আমরা প্রথমে মুসলমান তারপর বাঙালি। একজন মুসলমানের জীবনই নির্ধারণ করে দেয় অন্য কোন সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের কতোটা সে গ্রহণ করতে পারবে। অন্য কোন সংস্কৃতি মুসলমানের জীবন নির্ধারণ করে না। তাছাড়া ভারতের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে কেন্দ্রের শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন ছিলো কিন্তু বাঙালি নিজেদের স্বতন্ত্র ভাবতো। একক পাকিস্তানের অংশীদার ভাবেনি। তার প্রমাণ দেখো। পুরো পাকিস্তানের ঐক্যের জন্য একমাত্র উর্দুকে তারা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতে চায়নি। কিন্তু রাষ্ট্রের ঐক্য আর সংহতির জন্যে এটার প্রয়োজন ছিলো।
কিন্তু বাঙালি তো উর্দু জানে না?
শিখে নেবে, একটা ভাষা শিখে নিতে শিক্ষিত মানুষের ক’দিন লাগে?
তাও না হয় মানলাম কিন্তু আমাদের বাংলা ভাষার তো একটা হাজার বছরের ঐতিহ্য আছে। বাঙালি তো এই ভাষাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এই ভাষাই তার মায়ের ভাষা। এই ভাষায়ই তার প্রাণের স্পন্দন। আবেগের বহিঃপ্রকাশ। সে অন্য ভাষাতে কিভাবে তার স্বস্তি খুঁজে পাবে?
দেখো ইসলাম আসার আগে আরবরা অনেক কিছুতেই অভ্যস্ত ছিলো না। ধীরে ধীরে তারা ইসলামের রীতি নীতিতে ঠিকই অভ্যস্ত হয়ে গেলো। আর এভাবেই তারা সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিলো।
কিন্তু এটাও তো সত্য যে সেই প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হয়েছিলো দীর্ঘ তেইশ বছরে। হঠাৎ করেই পূর্বের সবকিছু বাদ দিয়ে দেওয়া হয়নি। এটা কিন্তু তুমিই একদিনের আলোচনায় বলেছিলে অথচ তারা তো পাকিস্তান জন্মানোর সাথে সাথেই বাংলাকে একেবারে বাদ দিয়ে উর্দুকে চাপিয়ে দিলো। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের ভাষাই ছিলো বাংলা।
পরবর্তীতে তো বাংলাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হয়েছিলো।
সেটা তো আওয়ামী লীগই করেছিলো। ওদেরকেও বাধ্য হয়ে সেটা মেনে নিতে হয়েছিলো। অবশ্য এছাড়া উপায়ও ছিলো না।
তোমার কথাই মানলাম। আচ্ছা তুমি কি জানো এই উপমহাদেশে একটা দীর্ঘ সময় ধরে মুসলমানরাই শাসকের আসনে ছিলো।
হ্যাঁ। জানি। তুমি বলেছো।
তারপর ইংরেজ এলো। তারা মুসলমানদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করতে শুরু করলো। আর তাতে কারা মদদ দিয়েছিলো? হিন্দুরা। প্রায় দু’শ বছরের ইংরেজ শাসনামলে হিন্দুরা যতোটা না লড়েছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে তার চেয়ে বেশী লড়েছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। যখন বঙ্গভঙ্গ হলো স্বদেশী আন্দোলনের ডাক দেওয়া হলো। এটা যতোটা না ছিলো বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তারও চেয়ে বেশী ছিলো মুসলমানদের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে এক ধরনের তীব্র আর সবল বিরোধিতা। এটা ছিলো হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানের একটা কর্মপদ্ধতি মাত্র। বঙ্গভঙ্গ যদি তাদের হৃদয়ে এতোটা আঘাত করে কই ১৯৪৭-এ যখন দেশভাগ হলো তখন তো তারা আগেভাগেই বঙ্গকে দুই ভাগে ভাগ করার জন্যে তৈরী হয়ে গেলো ভারতের সাথে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ নিয়ে যোগ দেওয়ার জন্যে। “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালাবাসি”-এর জন্যে এই দরদ তখন কোথায় গেলো? বরং জিন্নাই চেয়েছিলো বাংলা যদি স্বাধীন ভূ-খন্ড হতে চায় তাতে তার আপত্তি নাই। কিন্তু হিন্দু নেতারা যখন গো ধরলো বাংলা আর পাঞ্জাব ভাগ করতেই হবে তখন জিন্নাহও সেটা মেনে নিয়েছিলো। তাহলে উদারতার পরিচয় কারা দিয়েছিলো?
অবশ্যই মুসলমানরা।
তাছাড়া দেশভাগের সময় তারাই প্রাণ দিয়েছিলো বেশী। তাদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিলো। এ ক্ষত কখনও কি মোছবার?
এটা অত্যন্ত কষ্টের এবং দুঃখজনক তো বটেই। কিন্তু পরবর্তী বাস্তবতায় পশ্চিম পাকিস্তানীরাও কি আমাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করে ভুল করেনি।
১৯৪৭ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া পাকিস্তান বলতে গেলে ভারতের হাত থেকে কিছুই পায়নি। তার মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তুলতে হয়েছিলো হায়দরাবাদের নিজামের বিদেশে রক্ষিত অর্থের অনুদানের মাধ্যমে। কেন্দ্রের শক্তিশালী হওয়ার জন্যে কিছুটা সময় তো প্রয়োজন ছিলো।
কিন্তু বাঙালিকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানের সামনে এগিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা এটা কি খুব একটা ভালো বিষয়। সব সেক্টরেই তো তাদের প্রাধান্য ছিলো। বাঙালিকে এতোটা আন্ডার এস্টিমেট করা কি ঠিক ছিলো? সামরিক বাহিনী থেকে প্রশাসন - সর্বত্রই বাঙালির বিরল উপস্থিতি কি এটাই প্রমাণ করে না যে তারা আমাদের হীন চোখে দেখত। আমাদের অযোগ্য মনে করতো।
এ ব্যাপারে কিছুটা যে অন্যায় হয়নি তা বলবো না। তবে এই অবিচারের সমাধান অন্যভাবেও করা যেতো। সরাসরি বিচ্ছেদের পথে হাঁটাটা কি ঠিক হলো?
বিচ্ছেদের আগুন তো তারাই জ্বালালো। শেখ মুজিব নির্বাচিত নেতা। তাকে ক্ষমতা দিলে কি এমন ক্ষতি হতো।
কিন্তু মুজিব তো পাকিস্তানের আর দশটা প্রধানমন্ত্রীর মতো গতানুগতিক আর প্রচলিত কায়দায় প্রশাসন চালাতো না। সে তার ছয় দফা বাস্তবায়ন করতো যা কেন্দ্রকে দুর্বল করে শক্তিশালী ফেডারেল পদ্ধতির সরকার আনতো।
এতো তো প্রদেশগুলো শক্তিশালী হতো যা পুরো পাকিস্তানকেই শক্তিশালী করতো।
কিন্তু কেন্দ্রে যারা ছিলো তারা তো এটা চায়নি। তাছাড়া মুজিব তো শুধু পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ম্যান্ডেট পেয়েছিলো। পশ্চিম পাকিস্তানে তাঁর দল কোন আসন পায়নি। সেক্ষেত্রে তাদের উপর ছয় দফা চাপিয়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা কতটুকু। তারা মূলত পিপিপিকেই ভোট দিয়েছিলো। ভুট্টো তাই তাদের প্রতিনিধি হয়ে গেলো। তাদের স্বার্থ নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো। নেতা মাত্রই এটাই করবে। যারা তাকে নির্বাচিত করবে তাদের পক্ষেই সে কথা বলবে।
কিন্তু পাকিস্তানের অনেক জনপ্রতিনিধি এমন কি পিপিপি’র অনেক জনপ্রতিনিধিও তো মুজিবকে ক্ষমতায় বসাতে রাজী ছিলো। এই উদ্দেশ্য তারা ঢাকার টিকিটও কেটেছিলো। কেউ কেউ এসেও পড়েছিলো। তা হলে মুজিবকে সুযোগ দেওয়াটা কি তাদের উচিত ছিলো না। তার পদ্ধতি ব্যর্থ হলে সেটা তো দেখাই যেত। জনগণ না চাইলে ক্ষমতায় ঘাপটি মেরে বসে থাকার মতো মানুষতো মুজিব নয়। তার রাজনৈতিক জীবন তো সেটা বলে না। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ক্ষমতার চাইতে জেলেই বেশী সময় কাটিয়েছেন।
এ কথা অবশ্য সত্যি। তাকে সুযোগ দিয়ে দেখা যেত। আবার তারও কি উচিত ছিলো না পাকিস্তানের উভয় প্রান্তের মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। একটা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে সরকার গঠন করে তারপর ধীরে ধীরে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে আগানো। ছয় দফার মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ পাকিস্তানের ভাঙ্গনের গন্ধ খুঁজে পেতো। তাই এটা বাঙালির দাবী হলেও গোটা পাকিস্তানের জন্যে এটার প্রয়োগের ক্ষেত্রে তার আরও ধৈর্য্যরে পরিচয় দেওয়া উচিত ছিলো।
কিন্তু ’৭০-এর নির্বাচনের জনগণ তাকে যে ম্যান্ডেট দিয়েছিলো তা এই ছয় দফা বাস্তবায়নের জন্যেই। এক্ষেত্রে মুজিবের দায়বদ্ধতা ছিলো।
কথাটা মিথ্যে নয়। তার হাত-পা বাঁধা ছিলো। তিনি ওয়াদাবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা ইসলামিক প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের জন্যে হুমকি স্বরূপ ছিলো।
পাকিস্তান কি সত্যিই একটা ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ছিলো?
তা অবশ্য ছিলো না। তবে বেশীরভাগ অধিবাসী মুসলমান হওয়ায় এর চিন্তাধারা ও গতিপথ একটা ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের মতোই ছিলো। যদি তাই হতো তাহলে মুসলিম লীগকেই কেন তারা নির্বাসনে পাঠালো আর সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার অধিকারী ভুট্টোর পিপিপি কেই তারা ওপারের সর্বাধিক আসনে বিজয়ী করেছিলো? ব্যাপারটা জটিল ও মনস্তাত্বিক। এটা আরও ব্যাপক আলোচনার দাবী রাখে। এ নিয়ে পরে কথা বলা যাবে।
তা ঠিক। আজ তাহলে এখানেই থাক।